জামালপুর প্রতিনিধি:জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতারিত আমানতকারীদের বিক্ষোভের মুখে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এলাকার সব অফিসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় সব অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।বেলা ৩টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় আনুমানিক ৪ হাজার আমানতকারীকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা যায়।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সমবায় অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শতাধিক প্রতারক ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
২০২৩ সালে অর্ধশতাধিক সমবায় সমিতি ৩০ হাজার আমানতকারীর অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই গ্রাহকরা স্থানীয় প্রশাসনসহ জামালপুর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আমানতের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালান।
কিন্তু প্রশাসনের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বারবার আমানতের টাকা আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের আন্দোলন থেকে বিরত রেখে পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে পিছিয়ে যায়। এ অবস্থায় ঈদের পর থেকে প্রতারিত আমানতকারীরা মরিয়া হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
সোমবার আনুমানিক ৪ হাজার আমানতকারী নারী-পুরুষ টাকা উদ্ধারের দাবিতে মাদারগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিলসহকারে উপজেলা পরিষদে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। তারা বিভিন্ন অফিস থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দেন।
এ সময় সংবাদ চিত্র সংগ্রহের সময় বিক্ষুব্ধ আমানতকারীদের কয়েকজন একটি পত্রিকার প্রতিনিধি আলপনা জান্নাতের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং অপর একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিনিধি আনিছুর রহমান আইয়ুবকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চালান।
একপর্যায়ে আলপনা জান্নাতের মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়া হয়। আমানতকারীদের বিক্ষোভের মুখে সব সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস বন্ধ করে অন্যত্র চলে যান।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূরুল আমিন জানান, আন্দোলনকারীরা তাকে জোর করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন। তিনি পরে একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছেন। অফিসের অন্য কর্মচারীদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে বলে নূরুল আমিন জানান।
উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া তমাল জানান, আন্দোলনকারীদের কারণে তারা অফিসে তালা দিয়ে সবাই বাইরে চলে গেছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য এই প্রতিনিধিসহ অন্য সাংবাদিকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আমানতের টাকা উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী রাজু জানান, টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রশাসনের লোকজন কোনো সিদ্ধান্ত না দিলে সোমবার থেকে লাগাতার তিন দিন উপজেলা পরিষদে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
তিনি জানান, ২৬ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষার কারণে আন্দোলনের কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে।
রাজু জানান, জামালপুর জেলা প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা আদায় করে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেড় মাস আগে আমানতকারীদের আন্দোলন থেকে বিরত রেখেছিলেন; কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। উপরন্তু তিনি সম্পতি গ্রেফতার হওয়া শতদল সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে জামালপুর জেলখানায় দেখা করেছেন; যা আন্দোলনকারীদের কাছে খুবই রহস্যজনক মনে হয়েছে।