অনলাইন ডেস্ক:
‘হুমকির মুখে’ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হতে চাচ্ছেন না কেউ। পরপর তিনজন শিক্ষক এ দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিভাগীয় প্রধানের পদ প্রায় দুই মাস শূন্য রয়েছে।
এদিকে দ্রুত বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। সোমবার তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে একই দাবি জানিয়েছেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি এদিন উপচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শফিক আশরাফ যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ডিন কমিটির সভায় তা উন্মোচন করা হবে। এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না। তবে আশা করি, শিগ্গিরই শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয় এ বছরের ১০ মার্চ। এরপর দায়িত্ব দেওয়া হয় একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সহকারী অধ্যাপক রহমতুল্লাহকে দায়িত্ব দেয় প্রশাসন। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও দায়িত্ব নেননি।
অভিযোগ রয়েছে, একই বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমানের হুমকি-ধমকির কারণে দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না কোনো শিক্ষক। তবে এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না কেউ। ওই তিন শিক্ষকও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সম্প্রতি শিক্ষক তাবিউর রহমানকে উদ্দেশ করে ‘অবৈধ শিক্ষকের বিভাগীয় প্রধান হওয়ার হুমকি চলছে!’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক। তিনি পোস্টে লেখেন, জালিয়াতি করে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-হাইকোর্ট অবৈধ শিক্ষকের নিয়োগের ব্যাপারে এ রুল ও আদেশ জারি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক দুটি স্থায়ী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমানসহ ২২ জন প্রভাষক পদে আবেদন করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে প্রথম মো. মাহামুদুল হক ও দ্বিতীয় হিসাবে নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। পরে ‘জালিয়াতি’ করে মো. মাহামুদুল হককে বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় তৃতীয় হিসাবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। নিয়োগ পাওয়ার পর দুই দফায় পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক পদে আছেন তাবিউর রহমান। পরবর্তী সময়ে মো. মাহামুদুল হক হাইকোর্টে মামলা করলে আদালতের নির্দেশে ১১ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ফিরে পান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাবিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সঠিক না। তিনি বলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদ শূন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই শূন্য পদ পূরণ করুক, তা আমিও চাই। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ বলেন, বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইনি জটিলতা থাকায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।