বগুড়া প্রতিনিধি:
চলছে শরৎকাল। কখনও নীল আকাশে রোদের দাপট, কখনও হঠাৎ করে আকাশ কালো হয়ে নামছে বৃষ্টি। এতকিছু ছাপিয়ে পূজার মার্কেট এবারও জমজমাট। বগুড়ায় জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা। বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে ফিরেছে চিরচেনা ভিড়। সনাতন ধর্মাবলম্বীর নারী-পুরুষসহ সকল বয়সের মানুষ তাদের পছন্দ মতো পোশাক কিনছেন। পোশাকের পাশাপাশি কেনাকাটা করছেন খাবার ও পূজার জিনিসপত্র ছাড়াও উৎসবের সময় সেরা হওয়ার সব অনুষঙ্গ।
জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার বগুড়া জেলায় ৬২৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ বছর দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে ও গমন করবেন গজ বা হাতিতে। এই বিশেষ ক্ষণের জন্য অপেক্ষায় ভক্ত অনুরাগীরা। পূজায় কেনাকাটার জন্য বগুড়ার নিউমার্কেট, পুকুরপাড় মার্কেট, হকার্স মার্কেট, রানার প্লাজা, পুলিশ প্লাজা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণী বিতাণগুলোতে উৎসব প্রিয়দের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। রেডিমেড দোকানগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। তরুণীরা লাল, কমলা ছাড়াও উজ্জ্বল বাহারি রঙের ও বিভিন্ন ডিজাইনের কামিজ, কুর্তি, গাউন, ঘের দেওয়া জামা কিনলেও নারীরা কিনছেন জামদানি ও বিভিন্ন ধরনের সফট কাতান, তসর ও সিল্ক শাড়ি। এ ছাড়া পছন্দের তালিকায় রয়েছে জর্জেট শাড়ি ও হাফসিল্ক এবং দেশি তাঁতের শাড়ি।
বগুড়া নিউ মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানান, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। নারীদের পছন্দের তালিকায় এখনও শাড়িই সেরা। তারা পছন্দ করে কিনছেন দেশি, ইন্ডিয়ান ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। শেষ মুহূর্তে ভিড় বেড়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও সাধারণ ক্রেতারাও আসছেন।
পূজার কেনাকাটা করতে আসা শহরের চেলোপাড়ার শোভা রানী জানান, সপ্তাহ ধরে তারা পূজা উপলক্ষে কেনাকাটা করছেন। এখনও শেষ হয়নি। পরিবারের সদস্যদের পছন্দের পোশাক-স্যান্ডেল, জুয়েলারি কিনছেন। এ ছাড়া মায়ের জন্য নতুন শাখা, সিঁদুর ও পূজা সামগ্রী কিনেছেন তিনি। শোভা রানী বলেন, এবার সব কিছুর দাম বেশি।
এদিকে, মঙ্গলবার বগুড়ার চুড়িপট্টির দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কেউ কিনছে নতুন শাঁখা, কেউ বা কিনছে পূজার উপকরণ। প্রতিমাকে পরাতে নতুন শাড়ি, সিঁদুর সংগ্রহ করছেন অনেকেই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এসময় বিক্রি ভালো বলে জানান বিক্রেতারা। এ ছাড়া পূজা উপলক্ষে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ শহরমুখী হওয়ায় শহরের কেন্দ্রবিন্দু সাতমাথা, বড়গোলা, থানামোড়, ফতেহআলী মোড়, কাঁঠালতলা, ইয়াকুবিয়া, গোহাইল রোডসহ গোটা শহরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকছে। হঠাৎ বৃষ্টি, গরম ও যানজট এসব ভোগান্তি উপেক্ষা করেই শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ঘুরে উৎসবের জন্য পছন্দের পোশাক ও পূজার অন্যান্য কেনাকাটা সারছেন উৎসবপ্রিয়রা।
বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সিসিটিভি লাগানোর জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এবার উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার মো. জেদান আল মুসা জানান, মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়াও প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।