দেশে চালের বাজারে হরেকরকম প্রতারণা চলছে। যে নামে ধানের কোনো অস্তিত্বই নেই, সেই নামের চাল বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মেশিনে কেটে মোটা চাল চিকন করে ভিন্ন নামে বিক্রি হচ্ছে। চালের ওপরের অংশ ফেলে দিলে এর পুষ্টিমান নষ্ট হয়। ফলে ভোক্তা চিকন চাল ভোগ করার কারণে চালের প্রকৃত পুষ্টিগুণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। মোটা চাল চিকন করার কাজে যেসব যন্ত্র ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর দাম নাকি কোটি টাকা।
চালকল মালিকরা এ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বিভিন্ন কৌশলে তা ভোক্তাদের কাছ থেকেই আদায় করে। প্রশ্ন হলো, এ বিষয়ে যাদের নজরদারি থাকার কথা, তারা কী করছেন?
ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম কিছুটা কম থাকার কথা থাকলেও চালের বাজারের অস্থিরতা কমে না। ব্যবসায়ীদের নানারকম কারসাজির কারণেই এমনটি ঘটছে।
অভিযোগ আছে, অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজার তদারকি সংস্থার কোনো কোনো সদস্যের যোগসাজশের কারণেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। চালকল মালিকরা যে মোটা চাল যন্ত্রের মাধ্যমে কেটে সরু করে বিক্রি করে আসছেন, সে বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ জন্য তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এখন দেখার বিষয় চালের বাজারের এসব প্রতারণা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা।
বস্তুত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কাছে পুরো দেশবাসী জিম্মি হয়ে রয়েছে। কাজেই শুধু চাল নয়, কোনো ব্যবসায়ী যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য, বিশেষত ভোগ্যপণ্য বিক্রি করতে না পারে, এ বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক সময় দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে, তখন সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নমনীয় মনোভাবের কারণেই এমনটি ঘটছে।
এ সমস্যাগুলোর সমাধান একদিনে হয়ে যাবে, তা কেউ আশা করে না। তবে যখন সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তার দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে, তখন মানুষের হতাশা বাড়ে। কাজেই এসব সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে, এটাই কাম্য।