ইমরান মোল্লা,খুলনা:
হত্যাকান্ডের দুই সপ্তাহ পর ইজিবাইক চালক রায়হান হত্যা মামলার মূল আসামীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফলে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উন্মোচন ও হত্যকান্ডের ব্যবহৃত ছুরিটি পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। গতকাল বুধবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছে কেএমপি ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো কয়রার গোবিন্দপুরের আবু মুসা মিস্ত্রির ছেলে মোঃ বিলাল হোসেন (২৫) ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা এলাকার মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে মোঃ তৌফিকুর রহমান (২৪)।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলার প্রধান আসামি মোঃ বিলাল হোসেন ও মোঃ তৌফিকুর রহমান দিনমজুরের কাজ করতো। তাদের নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। গত ২৮ মে বিলাল হোসেন ও তৌফিকুর রহমান খুলনা রেল স্টেশন থেকে সকাল ১০ থেকে ১১টার দিকে গাড়ি চুরি পরামর্শ করে। সেই পরিকল্পনা মতে দুপুর ১টার দিকে বড় বাজার থেকে একটি বাটওয়ালা ছুরি কেনে ওরা। ওইদিন সন্ধ্যায় গলামারী থেকে ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে রোগী আনার জন্য ইজিবাইক ভাড়া করে। ইজিবাইকে যাওয়ার সময় আসামি বিলাল ও তৌফিকুর পথিমধ্যে দুজনই চালক রায়হানকে গাঁজা খাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
ইজিবাইক চালক গাঁজা খাওয়ার জন্য রাজি হলে তারা আড়ংঘাটা থানাধীন খুলনা সিটি বাইপাস সড়কের আকমানের মোড় সংলগ্ন একটি নির্জন ইটের সলিংয়ে যায়। আসামিরা গাঁজার কলকিতে টান দিয়ে ড্রাইভারের কাছে দেয়। পরবর্তীতে আসামি তৌফিক ইজিবাইক চালক রায়হানকে পিছন থেকে জাপটে ধরলে বেলাল ছুরি দিয়ে গলায় সজোরে পোচ দেয়। তারপর রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার গলায় বেল্ট দিয়ে পেচ দিয়ে অজ্ঞান করে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তারা তাবলীগ মসজিদের সামনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাড়ি রেখে ঘুমায়। সকালে মিস্ত্রি এনে ইজিবাইক ঠিক করে। অতঃপর তারা ২৯ মে সকালে কয়রায় ইজিবাইকটি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যায় এবং তার দুইদিন পর স্ট্যাম্পের মাধ্যমে পাইকগাছার জনৈক ব্যক্তির কাছে ইজিবাইকটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে যায়।
অন্যদিকে, হত্যাকান্ডের ঘটনায় আড়ংঘাটা থানার মামলায় (নং-০৫, ১০/০৫/২০২৪) আসামি গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একটি চৌকস টিম অভিযান শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের শনাক্তপূর্বক আসামিদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখে। এরই ধারবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে ওই মামলার ঘটনায় জড়িত মোঃ বিলাল হোসেন ও মোঃ তৌফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। আশুলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় তাদেরকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দেখানো মতে, আড়ংঘাটা থানাধীন ঘটনাস্থলের পাশ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি প্লাস্টিকের কালো হাতলযুক্ত স্টিলের ছুরি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আদালতে পুলিশ রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইজিবাইক ক্রয় করে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িয়ে যায় পাইকগাছার সোনাতন কাঠির আব্দুর রাজ্জাক শেখের ছেলে মোঃ রাজু শেখ (২৯); তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কাছ থেকে নিহতের ইজিবাইক উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় সে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূল ঘাতক মোঃ বিলাল হোসেন ও মোঃ তৌফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।