ইমরান মোল্লা:
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের খুলনা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের ১৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন।
খুলনা মহানগরীর টুটপাড়াস্থ নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাড়া বাড়ির সামনের রাস্তার একটি থামানো গাড়িতে বসে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আবুল কালাম আজাদকে ঘুষের টাকা ফেরত দেন। এ সময় আবুল কালাম গোপন ক্যামেরায় বিষয়টি ভিডিও করে রাখেন
যেখানে দেখা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার সময় ‘আপনি টাকা পয়সা গুনে নেন। টাকা পয়সা গুনে নেয়া সুন্নত। এখন আমার উপলব্ধি হলো আপনার কাছ থেকে টাকা নেয়াটাই হলো আমার জীবনে মস্তবড় ভুল বা পাপ হয়েছিল। সেই পাপের শাস্তি এখন পাইলাম আমি’।
ওই সময় ঠিকাদারকে বলতে শোনা যায়, আপনি টাকা পয়সা না দিয়ে আমাকে একটা কাজ-বাজ দিয়ে কিন্তু বিষয়টা সমাধান করতে পারতেন। প্রতিউত্তরে আনিসুজ্জামান বলেন, কাজকাম দেওয়ার সুযোগ নাই। আরে বললাম তো আপনার সঙ্গে পরিচয় হওয়াটা আপনার সঙ্গে লেনদেন হওয়াটা জীবনে সব থেকে মস্তবড় ভুল হইছে আমার।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের যশোর মনিরামপুর প্রজেক্টে ডিডব্লিউ-১, ডিডব্লিউ-২, ডিডব্লিউ-৩ ও ডিডব্লিউ-৫ এর মোট ৪টি কাজ পায় এইসি- খান- মায়াজ-(জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার কার্যাদেশের মূল্য ছিল ২৮ কোটি টাকা। এ কাজ পাওয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজের ৩ শতাংশ ৮৪ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তৎকালীন স্থানীয়দের সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান। টাকার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন তিনি।
বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ১৬ লাখ টাকা ঘুষ দেয় আনিসুজ্জামানকে। কিন্তু এই টাকার পরেও বাকি টাকার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখেন তিনি। আবুল কালাম আজাদের সাব কন্ট্রাকটরদের ধরে নিয়ে যান প্রকৌশলী। কার্যাদেশ বাতিল করার জন্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে করতে তার বদলি হলেও নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী এসে কার্যাদেশ বাতিল করে। এরপর কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও কোর্টের আদেশ অমান্য করে নতুন টেন্ডার দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের নভেম্বর যশোরের জেলা জজ আদালতে মামলা করেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবুল কালাম আজাদ।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চালাতে থাকে প্রকৌশলী। এরই মাঝে আনিসুজ্জামান বদলি হন খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে। বদলি হওয়ায় মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিতে চান আনিসুজ্জামান।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আবুল কালাম গাজী বলেন, যশোর মনিরামপুর প্রজেক্টে ৪টি কাজ পাই আমি। যার বাজার মূল্য ২৮ কোটি টাকার কিছু বেশি। এরপর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করতে থাকেন আনিসুজ্জামান। টাকা দেওয়ার পরও আরও টাকার দাবিতে আমার কাজ বন্ধ করে দেয়। মামলা করার পর তার খুলনায় বদলি হয়ে যায়। খুলনায় টুটপাড়া কবরস্থানের সামনে গেলে সে আমার গাড়িতে উঠে আমাকে টাকা দিয়ে কথাগুলো বলে। তখন আমি পুরো বিষয়টি ভিডিও করে রাখি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যশোরে আসেন ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। তাৎক্ষণিক কাজের জন্য সে সময় কিছু ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে একজন আবুল কালাম আজাদ। তাকে সে টাকা ফেরত দিয়েছি।
এদিকে জানা গেছে, একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগে আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।