November 11, 2025, 4:53 pm
ব্রেকিং নিউজ

শিক্ষক: জাতি গঠনের অমোঘ শক্তি

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Saturday, October 4, 2025
  • 41 দেখা হয়েছে

মমিনুল ইসলাম মোল্লা:

শিক্ষক হলেন জাতির মূল নির্মাতা। “শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর” কথাটি বহু শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক প্রচলিত করেছেন, যা আজও শিক্ষকের পেশার মহত্ত্বকে প্রতিফলিত করে। শিক্ষক শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দেন না, বরং ছাত্রদের চিন্তাশক্তি, নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকত্বকে তাই বলা হয় “মহান পেশা”—যা শুধু জীবিকা নয়, বরং জাতি ও সমাজ গঠনের অন্যতম মাধ্যম।

মহান পেশা বলতে সেই সকল পেশাকে বোঝায়, যা মানব কল্যাণ, নৈতিক উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত। শিক্ষক, ডাক্তার, সেনা, বিচারক, কৃষক—সবাই যদি তাদের দায়িত্ব পালন করে, তবে তারা জাতির জন্য মহান পেশার অধিকারী হয়। তবে শিক্ষকের ভূমিকা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক যখন মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো ছড়ান, তখনই শিক্ষার্থীর মধ্য দিয়ে পুরো সমাজ আলোকিত হয়।

বাংলাদেশে শিক্ষকতা তিনটি প্রধান স্তরে বিভক্ত—প্রাথমিক, মাধ্যমিক (হাই স্কুল) ও কলেজ। প্রাথমিক শিক্ষক হতে স্নাতক ডিগ্রি এবং DPEd বা PTI প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। হাই স্কুল শিক্ষক হতে স্নাতক/স্নাতক সম্মান এবং B.Ed বা অনুরূপ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কলেজে শিক্ষক হতে স্নাতকোত্তর বা উচ্চতর ডিগ্রি এবং অভিজ্ঞতা জরুরি। সব স্তরের শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু আছে—প্রাথমিক স্তরে NAPE ও PTI, মাধ্যমিক স্তরে NTRCA ও DSHE-এর প্রশিক্ষণ, কলেজ পর্যায়ে NAEM ও UGC-এর সেমিনার ও ICT প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের জ্ঞান, দক্ষতা ও শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনায় উৎকর্ষ আনে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয় প্রতি বছর ৫ অক্টোবর, যা ১৯৯৪ সালে UNESCO ঘোষিত। এর পেছনে ইতিহাসের সূত্র রয়েছে ১৯৬৬ সালের UNESCO–ILO-এর চুক্তিতে, যেখানে শিক্ষকদের মর্যাদা, অধিকার ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য শিক্ষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া, সমাজে তাদের মর্যাদা রক্ষা করা এবং নতুন প্রজন্মকে শিক্ষক পেশায় আগ্রহী করা।

তবে বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকগণ অর্থনৈতিকভাবে এখনও সমস্যার মুখোমুখি। সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় তাদের বেতন ও সুবিধা সীমিত। সরকারি শিক্ষকরা যে বেতন, পেনশন, ভাতা এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা পান, বেসরকারি শিক্ষকদের তা অর্ধেকের কাছাকাছি পাওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত থাকায় চাকরির নিরাপত্তা নেই, প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন কম। ভারতের, নেপালের বা শ্রীলঙ্কার বেসরকারি শিক্ষকদের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষকগণ আর্থিক ও সামাজিকভাবে অবহেলিত। এটি শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।

শিক্ষকতার মহত্ত্ব ও জাতি গঠনের অবদান অনস্বীকার্য। তাই শিক্ষককে যথাযোগ্য মর্যাদা, বেতন ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শিক্ষকরা মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি হয়ে শিক্ষার্থীর জীবন ও জাতির ভবিষ্যৎ আলোকিত করেন। বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নয়ন করলে, শুধু শিক্ষকই নয়, পুরো জাতিই উপকৃত হবে।

লেখক পরিচিতি -মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষা বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102