
মমিনুল ইসলাম মোল্লা:

বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে রান্নাঘরে জলপাই হলো পরিচিত একটি টক ফল। সাধারণত আচার বা ভর্তার মাধ্যমে খাওয়া হলেও, এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা চমকপ্রদ। জলপাইকে শুধু খাওয়ার একটি উপভোগ্য ফল হিসেবে না দেখে আধুনিক গবেষণা এখন এটিকে এক প্রাকৃতিক মহৌষধ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
জলপাইতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর। ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ঠান্ডা-কাশি ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। দৈনিক নিয়মিত কিছু পরিমাণ জলপাই খেলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে শরীর দ্রুত সাড়া দিতে পারে।
শুধু ভিটামিন সিই নয়, জলপাইতে আছে আঁশ, খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেটের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুক্ত মৌল ধ্বংস করতে সাহায্য করে, যা বার্ধক্য বিলম্বিত করে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ফলের মধ্যে থাকা ট্যানিন ও ফ্লাভোনয়েড যৌগও জীবাণুনাশক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে শারীরিক সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
জলপাই কেবল রোগ প্রতিরোধেই নয়, হৃদরোগ প্রতিরোধেও কার্যকর। এতে থাকা কিছু প্রাকৃতিক অ্যাসিড ও খনিজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভিটামিন ও খনিজের এই সমন্বয় হৃদপেশি স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, জলপাই খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হয়, চুলের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের কোষগুলো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
বাংলাদেশে সাধারণত জলপাই টক বা আচার হিসেবে খাওয়া হয়। তবে জলপাই ভর্তা, রান্না, জুস, চাটনি বা মোরব্বা আকারে খাওয়াও সম্ভব। প্রতিদিন প্রায় ৩০–৫০ গ্রাম পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্য উপকারে যথেষ্ট। বেশি পরিমাণে খেলে টকভাব বা লবণের কারণে গ্যাস্ট্রিক বা দাঁতের ক্ষতি হতে পারে, তাই পরিমাণ মেনে খাওয়া জরুরি।
প্রাচীন কালের প্রাকৃতিক চিকিৎসাবিদরা বলতেন, “প্রকৃতি দেয় আমাদের অনেক ঔষধ, জলপাই তার মধ্যে একটি।” আধুনিক গবেষণাও এখন এটি প্রমাণ করেছে। এক হাতে জলপাই খাওয়া মানে শুধু স্বাদ উপভোগ নয়, বরং দেহকে শক্তিশালী করে সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত রাখা।
সুতরাং, প্রতিদিন নিয়মিত জলপাই বা জলপাই ভিত্তিক খাবার গ্রহণ করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজমে সাহায্য হয় এবং হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমে। এটি এক প্রাকৃতিক, সহজলভ্য এবং সুস্বাদু মহৌষধ, যা আমাদের দৈনন্দিন খাবারের অংশ হওয়া উচিত।
লেখক পরিচিতি -মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও পুষ্টি বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।