চাইথোয়াইমং মারমা স্টাফ রিপোর্টার( রাঙ্গামাটি)
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার দুটি সরকারি কলেজের সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে বলে জানা যায় । এ পাশের হার এত টা নিচে নেমেছে যে, শিক্ষার মান নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
উপজেলার দুটি সরকারি কলেজ থেকে মোট ৩৩৫ জন পরীক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাশ করেছে মাত্র ৩২ জন। অর্থাৎ পাশের হার মাত্র ৯.৫৫ শতাংশ— যা রাজস্থলীর শিক্ষাক্ষেত্রে এক অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজস্থলী সরকারি কলেজ থেকে তিনটি বিভাগে মোট ১২৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়, এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে মাত্র ১০ জন। পাশের হার মাত্র ১৪.৮৫ শতাংশ। অপরদিকে বাঙ্গালহালিয়া সরকারি কলেজে অংশ নেয় ১৯৬ জন শিক্ষার্থী, পাশ করেছে মাত্র ১৮ জন— পাশের হার ৯.১৮ শতাংশ।
এই ভয়াবহ ফলাফল রাজস্থলীর শিক্ষাব্যবস্থার মান, শিক্ষক সংকট এবং মনিটরিং ঘাটতির একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে—
১-দুটি কলেজেই বেশ কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে।
২- ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মোবাইল ফোনে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি দিন দিন বেড়ে চলেছে।
৩- অভিভাবকরা সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি পর্যাপ্ত নজরদারি রাখছেন না।
এমন ফলাফলে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, “আমরা আমাদের সন্তানদের ভালো শিক্ষার আশায় সরকারি কলেজে ভর্তি করি। কিন্তু এমন ফলাফল মেনে নেওয়া যায় না। কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”
অভিভাবকরা আরো জানান,,এই ফলাফল শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা নয়; এটি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং ছাত্রদের পড়ালেখার প্রতি অনাগ্রহ—সব মিলিয়ে ফলাফল নিচের দিকে নেমে গেছে।”
অনেক শিক্ষার্থীও ফলাফলে গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন,, “আমরা নিয়মিত ক্লাসে যেতাম, কিন্তু বেশ কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো পড়াশোনা সম্ভব হয়নি।”
শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষক সংকট, মোবাইল আসক্তি এবং পরিবার থেকে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব— এই তিনটি কারণেই রাজস্থলীর কলেজগুলোর শিক্ষার মান দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে, অবিলম্বে শিক্ষক সংকট দূর করা, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও ক্লাস মনিটরিং বাড়ানো, এবং অভিভাবক সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা না হলে আগামী বছরগুলোতেও এমন ভয়াবহ ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
রাজস্থলী উপজেলার এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাই ভালো ফলাফলের আশায়, কিন্তু শিক্ষক না থাকলে তারা শিখবে কীভাবে? এখন সময় এসেছে সরকার এবং শিক্ষা অফিসকে কঠোরভাবে তদারকি করার।”
রাজস্থলী উপজেলার নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খান বলেন, “দুটি সরকারি কলেজের এমন হতাশাজনক ফলাফল সত্যিই দুঃখজনক। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনেছি— শিক্ষক সংকট এবং অবকাঠামোগত কিছু সমস্যার কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত পরিস্থিতি পরিবর্তনে পদক্ষেপ নিচ্ছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
উল্লেখ্য,রাজস্থলীর দুটি সরকারি কলেজের এই ভয়াবহ ফলাফল শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো এলাকার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক সতর্কবার্তা। এখনই যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এই ধরনের আরও খবর...