আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ পৃথিবীর মধুরতম ডাক মা। ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালোবাসা। শৈশব থেকে আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনা প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সবশেষ আশ্রয়স্থল মা নামের ওই মমতাময়ী নারীর আঁচল। বলছিলাম, বৃদ্ধা কয়েদ ভানুর কথা। কয়েদ ভানু
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নিভৃত পল্লী কাশিয়াবাড়ি গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেন এর স্ত্রী। একমাত্র বাকপ্রতিবন্ধী সন্তান আসকর আলী (৬২) কে নিয়ে বৃদ্ধা কয়েদ ভানুর জীবন কাটছে
অসহায়ত্বের কড়াল গ্রাসে।
বাকপ্রতিবন্ধী সন্তান আসকর আলী (৬২) চলাফেরা করতে পারেন না। চোখেও দেখেন না।
যে বয়সে স্ত্রী-সন্তান বা স্বজনের ওপর নির্ভরশীল হবার কথা। সেই বয়সে গৃহবন্দি আসকর আলীর
দিনযাপনের একমাত্র অবলম্বন অশীতিপর মা কয়েদ ভানু। অবুঝ শিশুর মতো মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে দিন কাটতে হচ্ছে আসকর আলীকে।
অতিদরিদ্র মা-ছেলের নেই বসবাসের মতো একখণ্ড জমি। অন্যের জায়গায় ছোট্ট একটা ঘরে কোনোমতে দিন কাটছে তাদের। আয় রোজগারের কেউ নেই। দিনে একমুঠো ভাত জুটবে কিনা, এ নিয়েও প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় মা-ছেলেকে। আসকর আলী কথা বলতে না পারলেও জীবনের প্রতি তার পাহাড় সম অভিযোগ।
একমাত্র বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মা কয়েদ ভানু। দেশ স্বাধীন হবার আগেই পরপারে চলে যান স্বামী আলতাফ হোসেন। স্বামীর মৃত্যুর পর এক বিভীষিকাময় পরিণতিতে কয়েদ ভানু ছোট্ট দুটি মেয়ে আর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে ভাসতে থাকেন কষ্টের অথই সাগরে। ঝি এর কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতেন তিন সন্তানের মুখে।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কয়েদ ভানু চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর ছোট তিন সন্তান নিয়ে রাস্তার ধারের খুপরি ঘরে, মানুষের গোয়াল ঘরে, কখনও বা ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় রাত কাটিয়েছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ওদের খাইয়েছি। মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিলেও অসুস্থ ছেলেকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। এমন নিষ্ঠুর জীবন যেন আর কারও না হয়।’
বয়সের ভারে কয়েদ ভানু কাজ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাও করেছেন কিছুদিন। তবে এখন ভিক্ষা করার শারীরিক সক্ষমতাও তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি জানান, রান্নাবান্নার কাজও করতে পারেন না। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তাদের সংসারেও নুন আনতে পানতা ফুরায়। ফলে মা-ছেলেকে দেখার মতো কেউ নেই। তবে কয়েদ ভানুর করুন আকুতি। অন্য দশ জনের মতো তিনি বাঁচতে চান।