অনলাইন ডেস্ক: আমেরিকার কোনও পুলিশ বাহিনীতে সর্বোচ্চ পদে একজন বাংলাদেশি আমেরিকানের অভিষেক ঘটছে আসছে শুক্রবার। বাপ্পী (খন্দকার আব্দুল্লাহ) ইইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পাচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পুলিশ বিভাগ, এনওয়াইপিডিতে তিনিই প্রথম বাংলাদেশী-আমেরিকান যিনি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে এত উচ্চপদে আসীন হলেন। এ পুলিশ বিভাগে প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতির রেকর্ড রয়েছে তাঁর। মেধা ও যোগ্যতায় একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে আসছেন। বর্তমানে খন্দকার আব্দুল্লাহ নিউইয়র্ক সিটির ৮১তম প্রিসিংক্টে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত। ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার পূর্ণ ইন্সপেক্টর হিসেবে ওয়ান পুলিশ প্লাজায় তাঁর পদোন্নতির আনুষ্ঠানিকতা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ পদোন্নতির আগে খন্দকার আবদুল্লাই ছিলেন স্বনামধন্য এনওয়াইপিডিতে একমাত্র বাংলাদেশি আমেরিকান ডেপুটি ইন্সপেক্টর। খন্দকার আব্দুল্লাহ’র মেধা, দক্ষতা এবং ক্রমাগত পদোন্নতিতে তাঁকে একদিন এনওয়াইপিডি-তে প্রধানের (Chief) পদে উন্নীত করবে বলে আশাবাদ প্রবল হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের সিলেটের সন্তান খন্দকার আব্দুল্লাহ অভিবাসী বাবা মায়ের হাত ধরে শৈশবে নিউইয়র্কে এসেছিলেন। বাবা সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তালতলা গ্রামের মরহুম খন্দকার মদব্বির আলী এবং মা শিক্ষিকা মুহিবুন্নেছা চৌধুরীর ছেলে আব্দুল্লাহ নিউইয়র্কে বেড়ে উঠলেও চমৎকার সিলেটি বাংলায় কথা বলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাকে নিয়মিত দেখা যায়। পরিবার নিয়ে শহরের লং আইল্যান্ডে বসবাস করেন খন্দকার আব্দুল্লাহ।
খন্দকার আব্দুল্লাহ ২০০৫ সালের গ্রীষ্মে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে তিনি যোগদান করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি একটি জব ফেয়ারে দেখেছিলেন যে এনওয়াইপিডি লোক নিয়োগ করছে। প্রথমে অনেকটা কৌতূহলের বশেই তিনি খণ্ডকালীন ইন্টার্ন হিসেবে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন সেই সময়েই তাকে পেয়ে বসেছিল। খন্দকার আব্দুল্লাহ ২০০৭ সালে পুলিশ অফিসার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
পদোন্নতির সংবাদে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খন্দকার আব্দুল্লাহ জানালেন, কখনই তিনি তার উৎসকে ভুলে থাকতে পারেন না। অন্য যেকোনো অভিবাসী পরিবারের মতো সুখ দুঃখ ও জীবন সংগ্রামের লড়াই তার জানা। বাংলাদেশি আমেরিকান প্রজন্ম আমেরিকার সমাজে ক্রমশ গুরুত্ব হয়ে উঠছে তাদের যোগ্যতা ও মেধার কারণেই। নিউইয়র্ক পুলিশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকান মেধাবী কর্মকর্তার সংযুক্তই ঘটেছে এরমধ্যেই। তা উল্লেখ করে আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের কমিউনিটি ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি অগ্রযাত্রার পেছনে পরিশ্রমী পরিবার ও কমিউনিটির অবদান রয়েছে। পদোন্নতির প্রাক্কালে খন্দকার আব্দুল্লাহ নিজের বৃহত্তর পরিবার ও বাংলাদেশি কমিউনিটি তাঁর প্রতি যে ভালোবাসা জানিয়ে আসছেন, তা উল্লেখ করে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বাপ্পীর এ আনন্দযাত্রায় আমার কেবলই মনে পড়ছে আমাদের ভাই খন্দকার মদব্বির আলীকে। আমাদের ছালিক ভাই ! ৫০ সিসি মটর সাইকেল চালিয়ে সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগে কন্ট্রাক্টারি করতেন। কন্ট্রাক্টের বড় কাজ তিনি ধরতেন না। কেউ ডেকে বড় কন্ট্রাক্টের অফার করলেও এড়িয়ে যেতেন। একজন সৎ বিনয়ী মানুষ হিসেবে তাঁকে বড় কন্ট্রাক্ট দিয়ে সহযোগিতা করতে ইচ্ছে প্রকাশ করতে দেখেছি বিভাগীয় প্রকৌশলীদের। আমাদের চাচা বড় কনট্রাকটর হান্নান চৌধুরী এ নিয়ে কতো বকাঝকা করতেন।নানা কারণেই আমাদের বকাঝকা করতেন মরহুম চাচা আব্দুর রহমান চৌধুরী। এ দুই চাচার প্রিয় ভাগ্নে ছিলেন ছালিক ভাই। বলতেন, বড় কাজের ডাক পেলে ভাগ্নে ছালিকের বুকে কাঁপন শুরু হয়। দুই ভাই একবার চাচার বকা খেয়ে চুপ করে বসে আছি। ছালিক ভাই বললেন, আমার ততোটুকু ব্যবসার দরকার তাই করবো ! কোটি কোটি টাকার আমার দরকার নেই !
আমেরিকায় আমার আগেই চলে এসেছিলেন। দেখা হলেই স্নেহ মাখা হাতে জড়িয়ে ধরতেন। এ সময় বাবা চাচাদের শরীরের গন্ধ পেতাম। শেষ কয়েকটি বছর পারকিনসিজম রোগে ভোগেছিলেন। আমার বাবাও একই রোগে ভোগে মারা গেছেন।
বাপ্পী, আমাদের বৃহত্তর পরিবারের পক্ষ থেকে, আমাদের স্বজন পরিজনদের পক্ষ থেকে তোমাকে অভিবাদন। তোমার ক্রম অগ্রযাত্রায় আমাদেরও মুখ নিত্য উজ্জ্বল হোক।