
মমিনুল ইসলাম মোল্লা:
ইসলামের ইতিহাসে সাহাবীরা শুধু নবীজির (সা.) সাথীই ছিলেন না, বরং তাঁরা ছিলেন আদর্শ মানুষ—আচরণ, বিশ্বাস, ত্যাগ ও কর্মে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করেছেন, যা ছিল তাঁদের গুণ, অবদান ও ঈমানের স্বীকৃতি। এই উপাধিগুলোর পেছনে রয়েছে অসাধারণ জীবনঘটনা, যা আজও আমাদের জন্য আদর্শ ও অনুপ্রেরণা।
আবু বকর (রাঃ)—“আস-সিদ্দীক” উপাধি পেয়েছিলেন মিরাজের ঘটনার সময়। সবাই যখন সন্দেহ করছিল, তখন তিনি নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, “যদি মুহাম্মাদ বলেন, তবে অবশ্যই তা সত্য।” এখান থেকে আমরা শিখি—অন্ধকার সময়ে সত্যে বিশ্বাস রাখা ও সাহসিকতা দেখানোই প্রকৃত ঈমান।
উমর (রাঃ)—“আল-ফারূক” উপাধিতে ভূষিত হন, কারণ তিনি ইসলাম গ্রহণের পর সত্য ও মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য তৈরি করেন। তার সাহসিকতা আমাদের শেখায়—সত্যের পথে দৃঢ় থাকা ও অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোই প্রকৃত নেতৃত্ব।
উসমান (রাঃ)—দুই কন্যার স্বামী হওয়ায় “যুন-নূরাইন” হন। তাঁর বিনয়, দানশীলতা ও কুরআন সংকলনের অবদানের মাধ্যমে আমরা শিখি—আড়ালে কাজ করেও উম্মতের জন্য বড় অবদান রাখা সম্ভব।
আলী (রাঃ)—“আসাদুল্লাহ” নামটি পান তাঁর বীরত্বের কারণে। বিশেষ করে খাইবার যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতা ছিল অতুলনীয়। আলী (রাঃ) শিখিয়ে দেন—জ্ঞান, সাহস ও তাকওয়ার সমন্বয়েই একজন পরিপূর্ণ মুমিন গঠিত হয়।
খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রাঃ)—“সাইফুল্লাহ”, অর্থাৎ “আল্লাহর তরবারি” উপাধি পান মুতার যুদ্ধে কৌশলী নেতৃত্বের জন্য। তাঁর জীবনী আমাদের শেখায়—যোগ্য নেতৃত্ব ও কৌশল প্রয়োগ দ্বীনের জন্য অপরিহার্য।
আবু উবাইদা (রাঃ)—“এই উম্মতের আমীন” উপাধি পান তাঁর সততা, দায়িত্বশীলতা ও বিশ্বস্ততার জন্য। আজকের সমাজে এই গুণগুলোর অভাব প্রকট—তাঁর জীবনী তাই আমাদের জন্য নৈতিকতার পাঠশালা।
আবু হুরায়রা (রাঃ)—“বিড়ালের পিতা” নামে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী। আমাদের শিক্ষা—ছোট ছোট কাজেও আন্তরিকতা থাকলে তাও স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
জাফর (রাঃ)—মুতার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে জান্নাতে “উড়ন্ত শহীদ” হন। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের শেখায়—দ্বীনের জন্য জান কুরবান করাই সর্বোচ্চ ত্যাগ।
হামজা (রাঃ)—“আল্লাহর ও রাসূলের সিংহ” উপাধি পান, যিনি ইসলাম রক্ষায় শহীদ হন। তিনি প্রমাণ করেছেন—ঈমানের রক্ষায় জীবন দেওয়াও গৌরবের বিষয়।
বিলাল (রাঃ)—ইসলামের প্রথম মুয়াযযিন। দাসত্ব থেকে মুয়াযযিন হয়ে ওঠা তাঁর জীবনী আমাদের শেখায়—আল্লাহর কাছে মর্যাদা জন্মে, জাত-পাত নয়।
এই উপাধিপ্রাপ্ত সাহাবীদের জীবন আমাদের দেখায়—সত্যনিষ্ঠা, আমানতদারি, ত্যাগ, সাহস ও আল্লাহভীতিই একজন মুসলমানের আসল পরিচয়। আজকের সমাজে যখন মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁদের জীবনই হতে পারে আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক।
লেখক পরিচিতি :মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সাংবাদিক, শিক্ষক ও ধর্মীয় লেখক, কুমিল্লা ।।