কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে রাস্তায় রাখা বালু নিয়ে খেলায় চার বছরের এক শিশুকে ডোবার পানিতে ছুড়ে ফেলায় বুড়িচং ফজলুর রহমান কলেজ অব টেকনোলজির শিক্ষক হাজী শাহজাহান (৫০) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শিশুটির মা শামসুন্নাহার তানিয়া।শুক্রবার সকালে শিশুটির মা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক।
মামলার নথির সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকালে নজির আহম্মেদের দুই মেয়ে মিফতাহুল মাওয়া এবং গালিবা সুলতানা (১০) শাহজাহানের বাড়ির সামনের রাস্তায় রাখা বালি নিয়ে খেলা করছিল। সেসময় শাহজাহান বালি নষ্ট করার অভিযোগে চার বছরের মাওয়াকে মারধর করে এবং কোলে তুলে পাশের ডোবায় ছুড়ে ফেলে দেয়।
এ ঘটনা দেখে তার বড় বোন গালিবা চিৎকার ও ছোট বোনকে উদ্ধারের জন্য কান্না করলে শাহজাহান তাকেও মারধর করেন। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে শাহজাহান চলে যান।
তখন প্রতিবেশীরা আহত দুই শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে মাওয়ার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। বর্তমানে শিশুটি সেখানে চিকিৎসাধীন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর হোসেন বলেন, “ছোট বাচ্চা তার উপর সাঁতার জানে না- হঠাৎ পানিতে ফেলে দেয়ায় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। ভাগ্য ভালো যে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শিশুটি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিল।”
শিশুটির মা শামছুন নাহার তানিয়া বলেন, “আমার ছোট মেয়েটা রাস্তার বালু নিয়ে খেলছিল, সে তো ছোট মানুষ- অপরাধ হলেও কি একজন শিক্ষক মানুষ একটা শিশু বাচ্চাকে এভাবে পানিতে ফেলতে পারেন!
“মেয়েটার জিহ্বা কেটে গেছে, ভয়ে খিঁচুনি চলে আসছে। তাকে বুড়িচং থেকে কুমিল্লা মেডিকেলে নিয়ে আসছি।”
শামসুন নাহার তানিয়া এই ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, “অপরাধ থাকলে আমাদেরকে বলতে পারত, কিন্তু আমাদের না বলে তিনি এমন অমানবিক কাজ করলেন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।”
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ করে শামসুন নাহার তানিয়ার সঙ্গে হাজী শাহজাহানের বাকবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।চার মিনিট ১৩ সেকেন্ডের সে ভিডিওতে শোনা যায় এক নারী (মাওয়ার মা) যখন ওই ব্যক্তিকে বলছিলেন, “আপনার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব নেই আপনি আমার বাচ্চাকে পানিতে ফেলে দিলেন। আপনি একজন সামাজিক মানুষ হয়ে এমন কাজ কীভাবে করতে পারলেন।
“একটু বালু ফেলে দিয়েছে বলে আপনি এভাবে আমার বাচ্চাকে পুকুরে ফেলে দিবেন? আপনি কি একটা যুক্তিসংগত কাজ করলেন এটা? আপনি আমার বাচ্চাকে ফেলে দেওয়ার পর না উঠিয়ে উলটো বলছেন- যে বাচ্চাটা মরে যাক।”
তখন ওই ব্যক্তি পালটা জবাবে বলেন, “তোমার বাচ্চা নাকি কার বাচ্চা এটা আমি দেখবো না। আমার কাছে বালির মূল্য বেশি, মানুষের কোনো মূল্য নাই৷“আর আমি সামাজিক মানুষও না৷ আজকে ২০ দিন ধরে সবাইকে বলতেছিলাম। কেউ আমার কথা শুনেনি। তোমার বাচ্চা এখানে এসে বালি ধরেছিল৷ তোমার বাচ্চা আমার এখানে আসবে কেন?”
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও হাজী শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তবে তার ছেলে নূর-এ শাহান রাজ বলেন, “আমার বাবা অসুস্থ, তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে যা করেছে তার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত। যেহেতু প্রায়ই আমাদের বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী বাচ্চাটা নষ্ট করছিল তাই উনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।”
“তবে তারা অভিযোগে বাচ্চাটির যে গুরুতর অবস্থা লিখেছে তা ঠিক নয়। আমরা এলাকার মুরুব্বীদের সঙ্গে কথা বলছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সামাজিকভাবে যা সিদ্ধান্ত হবে সে বিষয়ের অপেক্ষায় আছি।”
তিনি আরও দাবি করেন, “শিশুটিকে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফারের যে কথা অভিযোগে লেখা আছে তাও সঠিক নয়।”
এ বিষয়ে বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, “শুক্রবার সকালে শিশুটির মা বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় একটি শিশু নির্যাতন মামলা করেছেন। আমরা আসামিদের ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”