
মমিনুল ইসলাম মোল্লা:
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ। তারা দেশের প্রান্তিক বিদ্যালয়গুলোতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা নানামুখী বৈষম্য ও অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছেন। বিশেষ করে বাড়ি ভাতা না বাড়ায় তাদের জীবনযাত্রা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠেছে। নীচে এই দাবির পক্ষে দশটি যৌক্তিক যুক্তি তুলে ধরা হলো—
১️⃣ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি
বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ি ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ শিক্ষকদের বাড়ি ভাতা বছর দশেক ধরে অপরিবর্তিত। এতে তাদের বাস্তব আয় কমে গেছে, ফলে দৈনন্দিন খরচ সামাল দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।
২️⃣ সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য
একই শিক্ষাব্যবস্থায় কাজ করেও সরকারি শিক্ষকরা পূর্ণ ভাতা পান, কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান সামান্য অংশ। এই বৈষম্য শুধু অন্যায্য নয়, এটি শিক্ষকদের মানসিকভাবে নিরুৎসাহিত করে এবং শিক্ষা খাতের ভারসাম্য নষ্ট করে।
৩️⃣ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে ভাতা সমন্বয়হীনতা
প্রতিবছর মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কিন্তু ভাতা বাড়ছে না। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী বেতন ও ভাতা বাজারদরের সঙ্গে সমন্বিত হওয়া উচিত, নতুবা জীবনমান অবনতি অনিবার্য।
৪️⃣ শিক্ষকের মানসিক চাপ ও অনুপ্রেরণা হ্রাস
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা শিক্ষক সমাজকে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে। এতে তাদের শিক্ষাদান, সৃজনশীলতা ও একাগ্রতা নষ্ট হয়, যা সরাসরি শিক্ষার মানে প্রভাব ফেলে।
৫️⃣ পরিবার ও সামাজিক মর্যাদার সংকট
যথাযথ ভাতা না পেলে শিক্ষক পরিবার চালাতে গিয়ে লজ্জা, সংকোচ ও সামাজিক চাপের মুখে পড়েন। এতে শিক্ষক পেশার মর্যাদা ও আকর্ষণ কমে যায়, যা ভবিষ্যতে যোগ্য শিক্ষক সংকটের কারণ হতে পারে।
৬️⃣ রাষ্ট্রীয় ন্যায্যতার প্রশ্ন
শিক্ষকরা জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম কারিগর। অথচ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা রাষ্ট্রীয় ন্যায়ের পরিপন্থী। এই বৈষম্য দূর করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা।
৭️⃣ শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে
যদি শিক্ষক অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হন, তিনি মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারবেন না। তাই শিক্ষকের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা।
৮️⃣ আন্দোলনের ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং জীবনযাত্রার বাস্তব চাহিদা পূরণের দাবিতে। এটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রয়োগের উদাহরণ।
৯️⃣ ভাতা বৃদ্ধি সরকারের ভাবমূর্তি উন্নত করবে
সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়, তবে তা শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও সরকারের জনআস্থাকে আরও সুদৃঢ় করবে।
১০ দেশের উন্নয়নে শিক্ষকের ভূমিকা
শিক্ষক সমাজ জাতির আলোকবর্তিকা। তাদের জীবনমান উন্নত হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান, নৈতিকতা ও দক্ষতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা সরাসরি দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাতা বৃদ্ধি কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। শিক্ষককে সম্মান জানানো মানে শিক্ষা ও ভবিষ্যৎকে সম্মান জানানো। তাই অবিলম্বে তাদের দাবি বাস্তবায়ন সরকারের দায়িত্ব, জাতির স্বার্থেই।
লেখক পরিচিতি -মমিনুল ইসলাম মোল্লা সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষা বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।